এমএ হালিম :
সত্তর দশকের শেষ দিকের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জিম্বাবুয়ের (সাবেক রোডেশিয়া) স্বাধীনতা সংগ্রাম আর রবার্ট মুগাবে ছিল এক অবিচ্ছেদ্য কাহিনি। সে সময়ে জিম্বাবুয়ে রাজনীতিতে রবার্ট মুগাবের নিত্যদিনের ঘটনাপ্রবাহ স্বাধীনতা পিপাসু মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে বিবেচিত হতো। এক পর্যায়ে ১৯৮০ সালে শত বছরের ঔপনিবেশিকতা ভেঙে দেশটি ব্রিটেন থেকে স্বাধীন হয়, যে অর্জনে রবার্ট মুগাবের ত্যাগ আর সংগ্রামী ভূমিকা অনস্বীকার্য। আশির দশকে রবার্ট মুগাবে সদ্য স্বাধীন জিম্বাবুয়ের অবিসংবাদিত নেতা, সে দেশের সর্বমহলে যার স্থান ছিল অনেক উঁচুতে; দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে যিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট। সম্ভবত হাল আমলে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘকাল দেশ শাসকের আসনে।
এসব ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে করতে কখনো বা কৌতূহল হয়েছিল আফ্রিকার এই দেশটিকে দেখার। করোনা মহামারি শুরুর কিছু আগে আমার সুযোগ হয়েছিল রাজধানী হারারে ছাড়াও সাড়ে চারশ কিলোমিটার দূরে মেনেজি কাউন্টি (জেলা) ও তার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ভ্রমণসহ দেশটিতে প্রায় দুই সপ্তাহ অবস্থান করার। পেশাগত একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে জিম্বাবুয়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানার চেষ্টা করেছি। সেসব অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখব বলে ভেবে রেখেছিলাম, যদিও তা ভুলতে বসেছিলাম। ২৯ জুন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট সিরিজ খেলতে জিম্বাবুয়ে যাত্রা বিষয়টি মনে করিয়ে দিল।
মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও সাউথ আফ্রিকা- এই চারটি দেশ পরিবেষ্টিত জিম্বাবুয়ে আফ্রিকার অন্যতম একটি অবহেলিত দেশ, যার মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ১ হাজার ৩৯০ ডলার (২০১৯), যদিও এ পরিসংখ্যান সে দেশের সব মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন নয়। উল্লেখ্য, দেশটিতে এখনো মার্কিন ডলার প্রচলিত ও স্বীকৃত মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নিজস্ব মুদ্রা বলতে আছে একমাত্র দুই জিম্বাবুয়ে ডলার। আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় তিন গুণ (১ লাখ ৫০ হাজার বর্গমাইল) জিম্বাবুয়ের জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ১৪ লাখ (২০২০-এর পরিসংখান)। সড়কপথে রাজধানী থেকে মেনেজি যাওয়ার পথে মহাসড়কের দুপাশে বিস্তীর্ণ খালি মাঠ-পথ-প্রান্তর আর বন-জঙ্গল অতিক্রম করেছি। ১৫-২০, কখনো বা আরও বেশি মাইল পথ চলার পর কোথাও কোথাও ছোট্ট শহর এবং মানুষের সমাগম লক্ষ করেছি। রাস্তার দু’পাশের জমিতে বলা চলে তেমন চাষাবাদ নেই; কোথাও কোথাও ভুট্টার ক্ষেত দেখা গেছে।
জানতে পেরেছি, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে অন্যান্য ফসল তেমন চাষ হয় না। কিন্তু যেতে যেতে সবুজ গাছপালা, ঘন-জঙ্গল আর মাইলের পর মাইল সবুজ ঘাসে ভরা খালি মাঠ দেখে আমার কিন্তু তেমনটা মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছে, মানুষ হয় অলস অথবা চাষাবাদে অনাগ্রহী। আরও জানতে পেরেছি, মানুষ তাদের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানোর জন্য মূলত বৃষ্টিপাতের ওপরই নির্ভরশীল। এসব দেখে মনে হয়েছে, আমাদের দেশে মানুষের পানির উৎস খুঁজে নেওয়াসহ জীবিকায়নের প্রচেষ্টা তুলনাহীন। কেননা বাংলাদেশে কোথাও কোথাও সুপেয় পানির অভাব থাকলেও ব্যক্তি, সরকারি অথবা উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় মানুষ কোনো না কোনোভাবে সাংবৎসর কৃষিকাজের জন্য পানির সংস্থান করছে। খুলনা, সাতক্ষীরা এবং আরও কিছু এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে ফসলের মাঠ পতিত থাকলেও বছরের অধিকাংশ সময় আমাদের দেশের কৃষকরা কোনো না কোনো চাষাবাদে ব্যস্ত থাকে- হোক সে প্রধান ফসল ধান; না হয় তরিতরকারি। জিম্বাবুয়ের দৃশ্যপট উপলব্ধি করে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতে সে দেশের জনসংখ্যা যদি ৪০ কোটি হতো, তাহলে অধিকাংশ মানুষের দু’বেলা খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকট, একনায়কতন্ত্র আর বর্তমান শতাব্দীর শুরু থেকে চলা খরার প্রভাব জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশটির মাথাপিছু আয় একেবারে খারাপ না হলেও (১ হাজার ৩৯০ ডলার) অধিকাংশ সাধারণ মানুষের গড় আয়ু ন্যূনতম। দেশটির ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তাই দাতা সংস্থার অর্থায়নে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নগদ সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। কিন্তু আমার অবাক লেগেছে, এত অল্প পরিমাণ সাহায্য দিয়ে একটি পরিবার কীভাবে চলতে পারে। সে দেশের রেড ক্রসের একটি নগদ সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আমার সে ভাবনা আরও প্রকট হয়েছে।
সহযোগী সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এ কার্যক্রমের আওতায় একটি পরিবারকে মাসে মাত্র ৩৫ ডলার (২ হাজার ৯০০ টাকা) বিতরণ করা হচ্ছে। কোনো কোনো পরিবার হেঁটে, সাইকেলে চড়ে অথবা গাধার গাড়িতে করে পনেরো কিলোমিটারেরও বেশি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এ সাহায্য নিতে এসেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুরূহ হলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিস্তৃত। যা হোক, আমি যখন জিম্বাবুয়ে রেড ক্রসের সহকর্মীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রতি মাসে ৩৫ ডলার না দিয়ে এক বছরের সহযোগিতা এককালীন দিলে তো সুবিধাভোগী পরিবার তা বিনিয়োগ করে আয়বর্ধক (Income generation) কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে; যেমনটা বাংলাদেশে বহুলভাবে চলছে। বললাম, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টও পার্বত্য জেলাগুলোতে পরিবার পিছু সর্বোচ্চ এককালীন ৩৬০ ডলার (৩০ হাজার টাকা) বিতরণ করছে এবং বহু পরিবার সে সাহায্য সঠিক ব্যবহার করে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছে। সরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কোথাও কোথাও আরও বেশি অর্থ আয়বর্ধক সহযোগিতা হিসাবে বিতরণ করছে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে ব্রাকসহ আরও অনেক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার কথাও জানালাম।
প্রত্যুত্তরে কেউ বলেছে, এসব দরিদ্র পরিবার একসঙ্গে ‘এত টাকা’ পেলে তার সদ্ব্যবহার করবে না; অপচয় করবে। আমি বলেছি, সুবিধাভোগীদের সম্পৃক্ত করে তাদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারলে এবং তাদের টেকসই উপকারের কথা উপলব্ধি করানো সম্ভব হলে তারা যে টাকা নষ্ট করবে না, এটা আমাদের দেশে পরীক্ষিত। যদিও একথা তাদেরকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। তবে আসল কথা জেনেছি হারারে ফিরে এসে রেড ক্রসের এক পদস্থ কর্মকর্তার ভাষ্য থেকে। তিনি জানিয়েছেন, জিম্বাবুয়েতে লিকুইডিটি সংকট রয়েছে। একসঙ্গে এত মানুষকে সারা বছরের আর্থিক সাহায্য এককালীন বিতরণের মতো ডলার মজুত নেই। কারণ, এই কার্যক্রম শুধুই রেড ক্রস নয়, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থার অর্থায়নে প্রায় সারা বছর বহু পরিবারের জন্য পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু দেশটির সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় এ সংকট জিইয়ে রাখতে চায়, যেমনটা হচ্ছে আফ্রিকার আরও অনেক দেশে।
জানতে পেরেছি, এ দেশের শ্রম বাজার খুবই সস্তা। বহু দূর আর দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে মাত্র ৩৫ ডলার সাহায্য গ্রহণের জন্য বিতরণ কেন্দ্রে আসার ঘটনা থেকে তা সহজেই অনুমেয়। বিস্তীর্ণ অব্যবহৃত জমি আর সস্তা জনশক্তি দেখে আমার কেবলই মনে হয়েছে, আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা এ সুযোগ সহজেই গ্রহণ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আনার সুযোগ করতে পারেন, যেমনটা আমাদের অনেক উদ্যোক্তা ভিয়েতনামে করতে পেরেছেন। জিম্বাবুয়ের দারিদ্রতার সুযোগে সে দেশের অনেকেই শ্রম বিক্রি করতে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ আফ্রিকা পাড়ি জমায় আর তাদেরই শ্রমলব্ধ পণ্য বিশালাকার লরিতে করে তাদের দেশেই আমদানি হয়ে বাজার দখল করছে, যা মোট আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ।
আমরা মেনেজি থেকে হারারে ফেরার পথে ৪৫০ কি.মি. পথে এমন অসংখ্য লম্বাকার লরি অতিক্রম করেছি এবং ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেটে দেখেছি- কীভাবে তাদের দেশের কাঁচামাল দিয়ে প্রতিবেশী দেশে তৈরি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তাদের বাজার দখল করে রেখেছে। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে অনেক ইতিবাচক দিকও লক্ষ করেছি, যা শিক্ষণীয় মনে হয়েছে। দরিদ্র হলেও ৮৯ শতাংশ (২০১৪-এর পরিসংখ্যান) শিক্ষিত এই দেশটির মানুষের সৌজন্য বোধ দেখে অবাক হয়েছি। শহর-গ্রাম যেখানেই গেছি, তারা স্বাগত জানিয়েছে এবং ইংরেজিতে (তাদের অফিসিয়াল ভাষা) সাগ্রহে কথা বলতে এসেছে। কোথাও কেউ কেউ বাংলাদেশ নাম শুনতেই আমাদের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রার কথা বলে অভিনন্দন জানিয়েছে।
যদিও অনেকেই বলেছে ‘তোমার দেশের ক্রিকেট টিমের খেলার ধারাবাহিতকতা (Consistency) নেই। একবার ভালো খেলে আবার খারাপ।’ উল্লেখ্য, এ কথা আমি এবং আমার মতো অনেকেই বিশ্বাস করি। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল সঠিক নেতৃত্ব আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণেই এক সময়ের শক্তিশালী জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট টিম এখন দুর্বলতর। একটি পুরনো টেস্ট খেলিয়ে দল হলেও সামগ্রিক পরিসংখ্যানে জিম্বাবুয়ের অবস্থান ভালো নয়। এমন কী বাংলাদেশের সঙ্গে টেস্ট ফলাফল সমান সমান (৭টি জয়, ৭টি পরাজয় আর ৩টি ড্র) হলেও ওডিআই ও টি২০-এর ফলাফলে বাংলাদেশ থেকে অনেক পিছিয়ে আছে জিম্বাবুয়ে দল (৮৮টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৩২টি ম্যাচে জয়ী তারা)।
হারারে থেকে মেনেজি রওনা হওয়ার আগেই আমাদের পাসপোর্ট হাতের কাছে রাখতে বলা হয়েছিল। প্রায় দু’ঘণ্টা চলার পর একটি জায়গায় টহল পুলিশ আমাদের গাড়ি থামায়। ভেবেছিলাম বিদেশি হিসাবে আমাদের পাসপোর্ট দেখতে চাইবে। কিন্তু তা নয়, গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আছে কিনা, তা নিশ্চিত হলো। কেননা, সে দেশের আইন অনুসারে দুর্ঘটনাজনিত কারণে যাত্রীর প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা বাধ্যতামূলক। আমার জানা নেই, আমাদের এমন আইন আছে কিনা! কেননা, কখনো যাত্রা পথে আমাদের দেশের পুলিশকে গণপরিবহণে ফার্স্ট এইড বক্স আছে কিনা, তা খুঁজতে দেখিনি।
আরও একটি শিক্ষণীয় বিষয় জানানোর লোভ সংবরণ করতে পারছি না। ঢাকা থেকে দুবাই হয়ে যেদিন গভীর রাতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানে হারারে বিমান বন্দরে পৌঁছি; রাত তখন ৩টা হবে। ইমিগ্রেশন আনুষ্ঠানিকতা শেষে গাড়িতে করে হোটেলে যাওয়ার পথে একটি চৌরাস্তায় রেড সিগনাল দেখতেই ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল; অথচ কোনো দিকেই গাড়ি দেখতে পাইনি। গ্রিন সিগনাল লাইট না জ্বলা পর্যন্ত ড্রাইভার গাড়ি থামিয়েই রাখল। ট্রাফিক আইনের প্রতি সে দেশের একজন ড্রাইভারের শ্রদ্ধাবোধ দেখে আমি অবাক হয়েছি আর ভেবেছি- কবে হবে আমাদের দেশের মানুষের এই সচেতনতা। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে সর্বত্রই, যেখানে যেখানে সিগনাল ক্রস করতে হয়েছে।
শতকরা ৩৭ ভাগেরও বেশি দারিদ্র্যসীমার এই দেশটিতে সামাজিক অস্থিরতার ঘটনা খুব একটা শুনিনি। পাশাপাশি দারিদ্র্যতা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে শিক্ষানুরাগ দেখে ভালো লেগেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখেছি, শিশুরা বই কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে; যা নিশ্চয়ই এক সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
জিম্বাবুয়ের ঘটনাবহুল রাজনীতি এবং সর্বশেষ ২১ নভেম্বর ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের পদত্যাগ-পরবর্তী সে দেশের মানুষের দৃশ্যমান উল্লাস অর্থাৎ রবার্ট মুগাবে সম্পর্কে মানুষের এহেন সুপ্ত বিরাগের কথা আমার সে দেশে অবস্থানকালে বোঝা সম্ভব হয়নি। প্রেসিডেন্ট মুগাবে সম্পর্কে তাদের মিশ্র মনোভাবই জেনেছি। অনেকেই তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কথাই জানিয়েছেন। ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান অনেকেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন। আবার তার দীর্ঘ একনায়কতন্ত্র, ক্ষমতার জন্য দমন-পীড়ন ও প্রায় ২০ হাজার মানুষ হত্যা, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ভূমি অধিকার, দারিদ্র্য ইত্যাদি সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেকেই বিরক্তির কথা শুনিয়েছে, যা এক সময়কার তার বিপুল জনপ্রিয়তাকে ম্লান করেছে। বিশেষ করে এক পর্যায়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াইকে পদচ্যুত করা এবং নিজের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর বাসনা তার সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা অর্জনে তার দীর্ঘ সংগ্রাম, গেরিলা যুদ্ধ এবং এক দশকের বেশি কারাগার জীবন এতসব অর্জন সত্ত্বেও শুধু ক্ষমতা ধরে রাখার লালসা স্বাধীনতা অর্জনে তার সব ত্যাগকে ম্লান করেছে।
এতসব ঘটনা সত্ত্বেও ২৪ নভেম্বর ২০১৭ নতুন প্রেসিডেন্ট (মুগাবে সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট) এমারসন নানগাগওয়াই, যিনি এখনো ক্ষমতায়, এর অভিষেক অনুষ্ঠানে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মুগাবের প্রতি স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদানকে যেভাবে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন, তা রাজনৈতিক উদারতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমার এ মন্তব্য আবারও প্রতিফলিত হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবার্ট মুগাবের মৃত্যু-পরবর্তী নানা আনুষ্ঠানিকতা ও তার প্রতি সে দেশের আপামর মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে। যা হোক, গেল বছর দেশটির স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিম্বাবুয়ের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত অর্থনৈতিক স্থবিরতা, দারিদ্র্যতা এবং অন্যান্য সমস্যার উত্তরণ ঘটানোর সংকল্পের কথা বলেছেন। এখন দেখা যাক, তার এই দৃঢ়তা ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার কত তাড়াতাড়ি জিম্বাবুয়ের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।
লেখক : বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন পরিচালক